উৎসঙ্গ জাতক
বারাণসীর রাজা ব্রহ্মদত্তের সময়ে বনের ধারে এক মাঠে তিন জন লোক জমিতে লাঙ্গল দিচ্ছিল। সেই সময় বনের ভিতর একদল দস্যু কয়েকজন পথিকের সব লুণ্ঠন করে পালিয়ে যাচ্ছিল সেই মাঠের উপর দিয়ে। পথিকরা দস্যুদের ধরবার জন্য তাদের পিছু পিছু ছুটছিল।
দস্যুদের ধরতে না পেরে পথিকরা যে তিন জন লোক মাঠে জমি চাষ করছিল তাদের চোর বলে ধরে রাজার কাছে নিয়ে গেল। রাজা তাদের তখনকার মত কারাগারে আবদ্ধ করে রাখেন।
এমন সময় একজন স্ত্রীলোক আমাকে আচ্ছাদন দাও, আচ্ছাদন দাও বলে চিৎকার করতে করতে রাজার কাছে ছুটে গেল।
রাজা তার চিৎকার শুনে ভৃত্যদের বললেন, ওকে একটা বস্ত্র দাও।
কিন্তু ভৃত্যেরা সেই স্ত্রীলোককে বস্ত্ৰ দিলে সে তা নিল না।
ভৃত্যেরা রাজাকে একথা শোনালে রাজা স্ত্রীলোককে ডাকিয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রীলোকটি বলল, বস্তু নয়, স্ত্রীলোকের আসল আচ্ছাদন হচ্ছে তার স্বামী।
রাজা তখন আসল বৃত্তান্ত জানতে চাইলেন।
স্ত্রীলোকটি বলল, যে তিন জন লোককে পথিকরা চোর বলে ধরে এনেছে আসলে তারা চোর নয়। তারা চাষী, জমি চাষ করছিল। চোরেরা লুটপাট করে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে পারেনি।
রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সেই তিন জন লোকের সঙ্গে তোমার সম্বন্ধ কি? তাদের কথা বলতে তুমি এসেছ কেন?
স্ত্রীলোক বলল, ঐ তিন জন লোকের মধ্যে একজন আমার স্বামী, একজন আমার ভাই আর একজন আমার ছেলে। এরা গৃহস্থ চাষী, কেউই চোর নয়।
রাজা উভয় পক্ষের সব কথা শুনে স্ত্রীলোককে বললেন, তারা দোষী বা নির্দোষ যাই হোক যে তিনজন লোককে ধরে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনকে তোমার কথায় ছেড়ে দিতে পারি। এখন বল, তিনজনের মধ্যে কাকে ছাড়ব?
স্ত্রীলোকটি বলল, একান্তই যদি আর দুজনকে ছাড়তে না চান, তা হলে আমার ভাইকে ছেড়ে দিন।
রাজা আশ্চর্য হয়ে বললেন, সে কি! তোমার স্বামী ও ছেলের থেকে তোমার ভাই বড় হোল?
স্ত্রীলোক বলল, হ্যাঁ মহারাজ, আমি বেঁচে থাকলে স্বামী ও পুত্র দুই-ই পেতে পারি। কিন্তু যেহেতু আমার বাবা মা কেউ জীবিত নেই, সেইহেতু আমার ভাই গেলে আর ভাই পাব না।
রাজা তখন বুঝতে পারলেন, স্ত্রীলোকটি সত্যিই সরল প্রকৃতির, নীতিজ্ঞানী ও সত্যবাদী।
তিনি তার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনজনকেই ছেড়ে দিলেন। স্ত্রীলোকটি তার স্বামী, ভাই ও পুত্র তিনজকেই নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।