Type Here to Get Search Results !

বৌদ্ধ রীতিতে বর্ষ গণনা পদ্ধতি

বৌদ্ধ রীতিতে বর্ষ গণনা পদ্ধতি


বৌদ্ধ রীতিতে বর্ষ গণনা পদ্ধতি

বৌদ্ধ-গণনায় চন্দ্রমাস গণনা, জ্যোতিষ গণনার সৌরমাস গণনা নহে। চন্দ্রমাসের গণনায় ৩০ দিনে একমাস হয়। বৌদ্ধেরা সংবৎসরে তিনটি ঋতু গ্রহণ করে থাকেন। যেমন- গ্রীষ্মঋতু, বর্ষাঋতু এবং হেমন্তঋতু।

চারিমাসে একটি করে ঋতু হয়। প্রতি ঋতুতে আটটি করে ভিক্ষু উপোসথ হয়। যেমন- প্রথম উপোসথ, দ্বিতীয় উপোসথ, তৃতীয় উপোসথ, চতুর্থ উপোসথ, পঞ্চম উপোসথ, ষষ্ঠ উপোসথ, সপ্তম উপোসথ এবং অষ্টম উপোসথ। এইরূপে সংবৎসরে (৩টি ঋতু × ৮টি উপোসথ=) মোট ২৪টি ভিক্ষু উপোসথ হয়ে থাকে। প্রতি ঋতুতে তৃতীয় ও সপ্তম উপোসথগুলো ১৪ দিন করে হয়, অবশিষ্ট উপসোথগুলো হয় ১৫ দিন করে। অতএব সংবৎসরে ১৪ দিনের উপোসথের সংখ্যা হয় মোট ৬টি এবং ১৫দিনের উপোসথের সংখ্যা হয় মোট ১৮টি।

আবার বৌদ্ধ মল মাস পাওয়া বৎসরে মল মাসের জন্য গ্রীষ্ম ঋতুতে দুইটি উপোসথের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে উপোসথের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০টি। যেহেতু এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উপোসথ দুইটিও ১৫ দিন করে হয়ে থাকে। কাজেই বৌদ্ধ মলমাস পাওয়া বৎসরে উপোসথের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪টির পরিবর্তে ২৬টি হয়ে থাকে। ১৪ দিনের উপোসথগুলোকে বলা হয় চতুর্দশী উপোসথ এবং ১৫ দিনের উপোসথগুলোকে বলা হয় পঞ্চদশী উপোসথ।

বৌদ্ধ ধর্মীয় খবর পড়তে নিচের অনলাইন পত্রিকাগুলো ভিজিট করুন:(alert-passed)

👉 বৌদ্ধ বার্তা (buddhabarta.com) 

👉 বৌদ্ধ বার্তা (ব্লগ)

গ্রীষ্মঋতু আরম্ভ হয় হেমন্তঋতুর অষ্টম উপোসথ শেষ হওয়ার পরদিবস হতে, অর্থাৎ ফাল্গুনী পূর্ণিমার চতুর্দশী শেষ হওয়ার পরদিবস হতে এবং ইহার পরিসমাপ্তি হয় গ্রীষ্মঋতুর অষ্টম উপোসথ দিবসে অর্থাৎ আষাঢ় মাসে, যেই বৎসর মলমাস পায় সেই বৎসর গ্রীষ্ম ঋতুর দশম উপোসথ দিবসে অর্থাৎ শ্রাবন মাসে। বর্ষাঋতু আরম্ভ হয় গ্রীষ্মঋতুর অষ্টম উপোসথ শেষ হওয়ার পরদিবস হতে কিংবা মলমাস হলে দশম উপোসথ শেষ হওয়ার পরদিবস হতে অর্থাৎ আষাঢ়ী পূর্ণিমার চতুর্দশী শেষ হওয়ার পরদিবস হতে এবং ইহার পরিসমাপ্তি হয় বর্ষাঋতুর অষ্টম উপোসথ দিবসে অর্থাৎ আশ্বিনমাসে কিংবা মলমাস হলে কার্তিকমাসে। হেমন্তঋতু আরম্ভ হয় বর্ষাঋতুর অষ্টম উপোসথের পরদিবস হতে অর্থাৎ আশ্বিনী পূর্ণিমার চতুর্দশী শেষ হওয়ার পরদিবস হতে এবং ইহার পরিসমাপ্তি হয় হেমন্তঋতুর অষ্টম উপোসথ দিবসে অর্থাৎ ফাল্গুনমাসে কিংবা মলমাস হলে চৈত্রমাসে। তৎপর পুনরায় গ্রীষ্মঋতু আরম্ভ হয়।

প্রতিবৎসর আশ্বিনীপূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমাকে বর্ষাঋতুর ষষ্ঠ উপোসথরূপে গ্রহণ করে সংবৎসরের উপোসথগুলোর গণনা আরম্ভ করতে হয়। এই পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস ব্রত শেষ হয় এবং পরদিবস হতে কঠিনচীবর দান দেওয়া আরম্ভ হয়। সুতরাং এই প্রবারণা পূর্ণিমা হতে আরম্ভ করে ভিক্ষু উপোসথগুলো গণনা করা হয়। এভাবে ভিক্ষু উপোসথগুলো গণনা করলে বর্ষাঋতুর অষ্ঠম উপোসথ কার্তিকী পূর্ণিমায় বৌদ্ধদের কঠিন চীবন দানোৎসব শেষ হয়, হেমন্তঋতুর ষষ্ঠ উপোসথে মাঘীপূর্ণিমা হয়, হেমন্তঋতুর  অষ্টম উপোসথ ফাল্গুনী পূর্ণিমা পর্যন্ত ভিক্ষুরা প্রাপ্ত কঠিনচীবর নিজ নিজ হস্তপাশে রাখেন, গ্রীষ্মঋতুর চতুর্থ উপোসথ বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধপূর্ণিমা, গ্রীষ্মঋতুর অষ্টম উপোসথ (বৌদ্ধ মলমাস হলে দশম উপোসথ) আষাঢ়ী পূর্ণিমা এবং পরদিবস হতে ভিক্ষুদের বর্ষাবাস ব্রত আরম্ভ হয়ে থাকে। বর্ষা ঋতুর চতুর্থ উপোসথ ভাদ্রপূর্ণিমা বা মধুপূর্ণিমা এবং বর্ষাঋতুর ষষ্ঠ উপোসথ আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা অর্থাৎ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস ব্রত শেষ ।

এভাবে চন্দ্রমাস গণনায় প্রতি তিন বৎসর পর পর এক মাস করে বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাসকে বৌদ্ধেরা বৌদ্ধমতে বৌদ্ধ মলমাস বা অতিমাস (অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাস) বলে থাকেন। সাধারণতঃ প্রতিমাসে একটি পূর্ণিমা এবং একটি অমাবস্যা থাকে। কিন্তু যেই বৎসর যেই মাসে দুইটি পূর্ণিমা অথবা দুইটি অমাবস্যা থাকে সেই বৎসরের সেই মাসকে হিন্দুমতে মলমাস বা অতিমাস বলা হয়। বৌদ্ধেরা ইহাকে মলমাস গ্রহণ করেন না। যেই বৎসর এই বৌদ্ধ মলমাস হয় সেই বৎসর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গ্রীষ্মঋতুর অষ্টম উপোসথ গণনায় আষাঢ়মাসের ১৮ তারিখ কিংবা তৎপূর্বে পড়ে। কাজেই ইংরেজী লিপইয়ার গণনার ন্যায় এই অষ্টম উপোসথকে আষাঢ়ী পূর্ণিমারূপে গ্রহণ না করে সেই গ্রীষ্মঋতুতে নবম ও দশম উপোসথ নামে দুইটি উপোসথ বৃদ্ধি করে তৎপরবর্তী শ্রাবণী পূর্ণিমাকে দশম উপোসথ করত: আষাঢ়ী পূর্ণিমারূপে গ্রহণ করে নিতে হয়। এজন্য এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত একমাসকে বৌদ্ধ মলমাস বা অতিমাস এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বৎসরকে বৌদ্ধ মলবৎসর বলা হয়। কাজেই যেই বৎসর বৌদ্ধ মলমাস হয় সেই বৎসর গ্রীষ্মঋতু অষ্টম উপোসথের পর বৃদ্ধি হয়ে নবম ও  দশম হয়ে দশম উপোসথেই গ্রীষ্মঋতু শেষ হয়। তখন ভিক্ষু উপোসথ ২৪টির পরিবর্তে ২৬টি হয়ে থাকে। বৌদ্ধ দেশে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তথা গৃহীরা এভাবে উপোসথ গণনা করে বৌদ্ধ বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করত বৎসরের প্রতি ঋতুতে উপোসথ দিবসগুলো উদযাপন করে থাকেন। ইহাই বৌদ্ধ বিনয়সম্মত উপোসথ পঞ্চিকা গণনার নীতি।

উৎস: নিদান, শ্রীমৎ প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.