পুণ্যকী?
পুণ্য অথবা ভাল কাজ অর্থ যা চিত্তে ঘটে থাকে এবং যার কারণে চিত্ত খাঁটি ও পরিস্কার হয় এবং দুঃখ ও অন্ধকার চিত্ত থেকে বিদায় নেয়। পুণ্যের সাহায্যে আমরা আমাদেরকে মিথ্যা চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে উচ্চ দিকে উন্নিত করতে পারি। যা আমাদেরকে ইতিবাচক চিন্তায় নিবিষ্ট করে এবং যা আমাদের ভাল ব্যবহার এবং সুবাক্য প্রয়োগে নির্দেশনা প্রদান করে।
পূর্বে
আমরা একবার যে পুণ্য সৃষ্টি বা গঠন করে থাকি তা ফলপ্রসু এবং এটা আমাদের জীবনে অধিকতর
উত্তম অবস্থা আনয়ন করে থাকে। পুণ্যের প্রভাবে আমরা আত্মবিশ্বাসী, শুদ্ধ, সুখী, উষ্ণ
এবং শান্ত হব। আমাদের সৎ চিন্তা থাকবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, পুণ্য সব সময় প্রতিদিন
সংযুক্ত হবে এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে প্রতিদিন পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা কতটা জরুরি।
আমরা
আমাদের কাজেও বিরাট সুফল বয়ে আনতে পারি। কারণ পুণ্য একটি শুদ্ধ শক্তি, কেউ তা খোলা
চোখে দেখতে পারে না। এখনও আমরা জানি পুণ্য সত্য কারণ আমরা তার প্রতিক্রিয়া অথবা আমাদের
জন্য কী সুফল আনয়ন করে তা দেখতে পাই। যখন পুণ্য হয় আমাদের তখন আমরা সুখী মানুষে রূপান্তরিত
হই। পুণ্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে কোন কিছু বলতে গেলে উদাহরণ স্বরূপ বিদ্যুৎ কে আমরা
বেছে নিতে পারি।
বিদ্যুৎ
এমন কোন বস্তু নয় যা আমরা দেখতে পারি কিন্তু আমরা জানি এটির অস্তিত্ব সম্পর্কে, কারণ
যখন বিদ্যুৎ এমন কোন বস্তুর সাথে সংযুক্ত করা হয়, তার শক্তি তখন আলো সৃষ্টি বা সরবরাহ
করে অথবা বাতাসকে ঠাণ্ডা করে তোলে। যেমন বৈদ্যুতিক বাতি ও বৈদ্যুতিক পাখা।
পুণ্য সম্পাদনে আমাদের কী মঙ্গল হয়?
১.
পুণ্য আমাদের মন এবং বাক্যকে পরিশুদ্ধ করে।
২.
পুণ্য সুখ, উন্নতি এবং অগ্রসরতা আনয়ন করে।
৩.
পুণ্য প্রত্যেক মানুষের সাথেই থাকে যাদের মাধ্যমে পূন্য সম্পাদিত হয় তাই এটা কেউ ছিনিয়ে
অথবা চুরি করে নিতে পারে না।
৪.
পুণ্য আমাদেরকে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবনেও অনুসরণ করে থাকে।
৫.
পুণ্য ধন এবং উন্নতি বিভিন্ন দিক থেকে আনয়ন করে।
৬.
পুণ্য আমাদের ধন প্রদান করে যখন আমরা মনুষ্য জগতে বাস করি স্বর্গে বাস করি এবং নির্বাণে উপনীত হই।
৭.
পুণ্য আমাদের সংসার চক্র থেকে রক্ষা করে যা পুনঃ জন্মের চক্র।
৮.
পুণ্য আমাদের নির্বাণ লাভে সাহায্য করে।
টীকা:
নির্বাণ (সংস্কৃত) অথবা নিব্বাণ (পালি) এমন এক জায়গা যেখানে যারা উপনীত হন তারা পৃথিবী
এবং ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে সর্বজ্ঞান সম্পন্ন এবং তাদের জীবন সম্পূর্ণ রূপে পরিশুদ্ধ।
তারা ভবচক্র ছিন্ন করে মুক্ত হয়েছেন।
দু'প্রকারের পূণ্য রাশি
১.
অতি পূর্ব হতে কৃত পুণ্য, অর্থ ভাল কার্যাবলী ফল যা আমরা আমাদের পূর্ব জন্ম থেকে সঞ্চয়
করে আসছি, এই জন্মে মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করার কাল বা সময় পর্যন্ত।
২.
কিছু কাল পূর্ব হতে কৃত পুণ্য, অর্থ ভাল কার্যাবলী যা আমরা সম্পাদন করে পুণ্য সঞ্চয়
করেছি আমাদের জন্মাবার বা জন্ম কাল হতে আজকে পর্যন্ত। অতি পূর্বে কৃত পুণ্য রাশি যা
আমাদের বর্তমান জীবনে ফলদায়ক, তা সুস্বাদু ফলের সাথে তুলনা করা যায়। আমরা আমের চারা
মাটিতে রোপন করার পর যে গাছ জন্মায়, তা অতি সুস্বাদু আম প্রদান করে। যদি আমরা যথেষ্ট
পুণ্য পূর্বে সঞ্চয় করে থাকি, তবে এ জন্মে শিশুকাল হতেই আমরা পরিশুদ্ধ চিন্তা চেতনা
এবং চটপটে হব এবং সুখী হব। আমরা শক্তিশালি, সুদর্শন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব।
পুণ্যঅর্জনের অধিকতর দশটি উপায় তোমার জন্য:
১।
উদারতা: আমাদের অপরকে দ্রব্যাদি দান করতে হবে যা তাদের প্রয়োজন। শীল সমূহ: কায়, মন
ও বাক্য তিন পর্যায়ে আমাদের আচরণের প্রতি আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কখনও নিজেদের এবং
অন্যের সমস্যার এবং যন্ত্রনার কারণ না হওয়া।
৩।
ধ্যান: প্রার্থনা করা, ধ্যান অনুশীলন এবং ধর্ম গ্রন্থ নিয়মিত পড়া। ধ্যান সাধনা আরও
অধিক পরিমাণে আমাদেরকে জ্ঞানী করে।
৪।
নম্রতা: বিনয়ী হতে হবে এবং যারা ধর্মপরায়ন তাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
৫। কার্য: ভাল কাজ করতে চেষ্টারত মানুষকে সাহায্য করা।
৬।
পুণ্য দান: অতিরিক্ত শক্তি এবং সামর্থ্য প্রদান করা অপরকে আমাদের পূর্বে কৃত পুণ্য
কর্ম হতে পূণ্য অন্যকে দান করার মাধ্যমে।
৭।
অন্যের পূণ্য অনুমোদন করা: সুখী, খুশি হওয়া এবং যখন অপর ব্যক্তিগণ ভাল কাজ সম্পাদন
করে তা অনুমোদন করা।
৮। ধর্মদেশনা বা ধর্মপোদেশ শ্রবণ করা: ভাল কার্য সম্পাদন করতে ধর্ম নিদের্শনা প্রদান
করা এবং ধর্মপোদেশ শ্রবণ করা কারণ এটি মানুষকে নিজেদের নৈতিকতার প্রতি দৃষ্টি প্রদান
করতে শিক্ষা প্রদান করে।
৯। ধর্ম শিক্ষা বা ধর্ম জ্ঞান প্রদান করা: অন্যের সাথে ধর্মজ্ঞান আলোচনার মাধ্যমে ভাগ
করা বা ধর্ম জ্ঞান দান করলে তা তোমার নিজের ধর্ম জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে পুনঃ নিরীক্ষণ
করতে সাহায্য করবে।
১০। আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গী সমূহের সোজাসুজি বিন্যাস: চিন্তায়, কাজে, বাক্যে প্রকাশ করা
এবং কার্য সম্পাদনে কী উত্তম তা বোঝা।
পুণ্য কীরূপে বিভিন্ন স্তরে কাজ করে
১.
চিত্ত স্তর: যখন আমরা ভাল কাজ করি, ইতিবাচক ফল বা প্রভাব আমাদের চিত্তে তৎক্ষণাৎ ঘটে
থাকে। আমাদের পরের জন্মের জন্য অপেক্ষমান থাকতে হয় না। আমরা শান্ত, আত্ম বিশ্বাসী
এবং নিরপেক্ষ হব অন্যের প্রশংসা অথবা সমালোচনায় । সাথে সাথে আমাদের সৎ চিন্তা থাকবে।
আমরা কোন সমস্যায় দ্রুততার সাথে চিন্তা করে এবং সমাধান সঠিক রূপে করতে পারিব এবং অধিকরূপে
পরিচ্ছন্ন এবং নিয়মানুবর্তী হব।
২.
দৃশ্যমান স্তর: যদি আমরা উদার হই, শীল প্রতিপালন করি, এবং ধ্যান সাধনা করি তাহলে আমাদের
চিত্ত সবসময় পরিষ্কার, শান্ত থাকবে এবং বিমর্শ অথবা দুঃখ থাকবে না। আমাদের কোন দুঃচিন্তা
থাকবে না এবং রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। যদি আমরা সব সময় সকলের জন্য শুভ কামনা করি
কখনও কোন জিনিস চুরি করতে না চাই অথবা কাউকে দুঃখ বা কষ্ট না দেই, তাহলে আমরা নিজেদের
সম্পর্কে নিজেরা আত্মবিশ্বাসী ও গৌরব বোধ করব তাই আমরা দেখতেও সুন্দর হব।
৩।
জীবন যাপনের স্তর: আমরা বর্তমানে যে রূপে জীবন যাপন করি তা পুণ্য এবং অঙ্কুশল কর্মের
পরিমানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা আমরা পূর্ব জন্ম থেকে এই জন্য পর্যন্ত সম্মিলিত
রূপে সম্পাদন করে এসেছি আমাদের ইতিবাচক মন এবং চরিত্রের মাধ্যমে । যদি আমাদের পুণ্য
কর্ম ফল দেয়, আমরা সুখী হব। যেভাবে হউক, যদি আমাদের পাপ কর্ম বা অকুশল কর্ম ফল দেয়,
আমরা সমস্যা গ্রস্থ হব। এই কারণে আমরা আমাদের জীবন যাপনের ধরণ বা জীবন যাত্রার শুধু
মাত্র পূণ্য কর্ম করার মাধ্যমে রূপ দান করতে পারি এবং আমরা ভাল জিনিস কেবল পূণ্য হতেই
লাভ করতে পারব।
৪।
সামাজিক স্তর: যখন আমাদের সৎকর্ম কাজ করে বা ফল দান করে তখন কোথায় আমরা অবস্থান করি
তা কোন ব্যাপার নয়, মানুষ আমাদের পছন্দ করবে এবং এটার কারণে আমরা দল নেতায় পরিনত
হব। আমরা এমন মানুষে পরিনত হব যে অপরকে ভাল কর্ম সম্পাদনে নির্দেশনা প্রদান করে, যা
আমাদের সমাজকে অধিক উন্নত করবে।
পূর্বে সম্পাদিত পুণ্যকর্ম হতে তুমি কী লাভ করবে?
১।
তুমি যা কামনা করবে তা লাভ করবে। এটা তোমাকে সহজেই নতুন পুণ্য সম্পাদনে সাহায্য করবে।
২।
জীবনে তুমি সকল লাভ এবং সুখ ও সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে। ৩। সকল পুণ্য তোমার জীবনে সুখ আনয়ন
করে থাকে।
৪।
পুণ্য এই জীবনের এবং পরবর্তী জীবনের তথা নির্বাণ লাভ করা পর্যন্ত বিশেষ রূপে সহায়তা
প্রদান করে। এমন কি যদি কোন ব্যক্তি যে পূর্ব জন্ম সৎকার্য সম্পাদন করেছে এবং গরীব
অবস্থায় বর্তমানে রয়েছে, সে ভাল এবং সাফল্যবান হতে পারে, এই গল্পের যুবকের ন্যায়।
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।